জমি সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধান : পর্ব -১

প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর ৪, ২০১৬ সময়ঃ ৩:১৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৫৩ অপরাহ্ণ

register-deed1জমি কিনেছেন কিন্তু ঝামেলা পোহাতে হয়নি এমন মানুষ আমাদের দেশে মেলা ভার। আর এইসব ঝামেলা পোহানোর পেছনের মূল কারণ নিজের দেশের প্রচলিত আইন-কানুন সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা।

আইন না জানার কারণেই আমরা আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না এবং ফলাফল মামলা মোকদ্দমা।নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা রাখা প্রয়োজন। আজকের পর্বে থাকছে জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত আলোচনা

জমি রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে জ্ঞাত হবার পূর্বেই জেনে নিতে হবে জমি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা? প্রয়োজনীয়তা যতটুকু না রয়েছে তার চেয়ে আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে অনেক বেশী। জমি রেজিস্ট্রেশনের বাংলাদেশে প্রযোজ্য সম্পত্তি হস্তান্তর (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৫৪এ ধারা অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় চুক্তি হবে লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত।

২০০৪ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন সংশোধনের পর মৌখিক দান/বিক্রয় বৈধ নয়।সুতরাং আইনের দিক থেকে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। আর প্রয়োজনের দিক থেকে আইনকে প্রধান্য দিতে হবে আগে।

জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন না হলে আইনের দিক থেকে কোন সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রেজিস্ট্রিকৃত দলিল থাকলে পরবর্তীতে বিরোধ এড়ানো যায়। আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় দলিল অবশ্যই লিখিত এবং রেজিস্ট্রি হতে হবে।

জমি রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম; সবার জেনে রাখা দরকার!

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (সংশোধন) আইন ২০০৪ (The Specific Relief Act ) এর ২১এ ধারার বিধান অনুসারে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বলবতের দুই শর্ত –

১. লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত বায়না ব্যতীত চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যাবে না।

২. বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে মামলা দায়ের করা যাবে না।

রেজিস্ট্রেশনের সময় যে সকল কাগজপত্র প্রদান করতে হয়:

দলিল রেজিস্ট্রারিং অফিসার এ আইনে নতুন সংযোজিত ৫২এ ধারার বিধান অনুসারে বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপিত কোন দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় না যদি দলিলের সাথে নিচের কাগজগুলো সংযুক্ত থাকে:

১. রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর বিধান অনুসারে প্রস্তুতকৃত সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান, বিক্রেতার নাম যদি তিনি উত্তরাধিকার সূত্র ব্যতীত অন্যভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন।
২. প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুসারে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান, বিক্রেতার নাম বা বিক্রেতার পূর্বসূরীর নাম যদি তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে ঐ সম্পত্তি পেয়ে থাকেন।
৩. সম্পত্তির প্রকৃতি।
৪. সম্পত্তির মূল্য।
৫. চতুর্সীমা সহ সম্পত্তির নকশা।
৬. বিগত ২৫ বৎসরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
৭. দাতা কর্তৃক এ মর্মে একটি হলফনামা (Affidavit) সম্পাদন করতে হবে যে তিনি উক্ত সম্পত্তি ইতোপূর্বে কারো নিকট বিক্রি করেননি এবং তিনিই দলিলে উল্লেখিত সম্পত্তির মালিক (He has Lawful Title)।

বিক্রয় বা সাregistrationফ কবলা দলিলের রেজিষ্ট্রেশন ব্যয় নিম্নরূপ:

২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে পৌর এলাকা ভুক্ত এলাকার জন্য:
ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প (সম্পত্তির মূল্যের) – ৩.০%
সরকারী রেজি: ফি (যা রেজিষ্ট্রি অফিসে নগদ জমা দিতে হয়) – ২.০%
স্থানীয় সরকার ফি (যা রেজিষ্ট্রি নগদ জমা দিতে হয়) – ১.০ %
উৎস কর (এক লক্ষ টাকার উপরের জন্য প্রযোজ্য) – ২.০%
গেইন ট্যাক্স ( পৌর/ সিটি কর্পোরেসনে জমা দিতে হয়) – ১.০ %
মোট = ৯.০%

পৌর এলাকা বা সিটি কর্পোরেশন বহির্ভূত/ ইউনিয়ন পরিষদভুক্ত এলাকার জন্য:

ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প (সম্পত্তির মূল্যের) – ২.০ %
সরকারী রেজি: ফি (যা রেজিষ্ট্রি অফিসে নগদ জমা দিতে হয়) – ২.০ %
স্থানীয় সরকার ফি (যা রেজিষ্ট্রি নগদ জমা দিতে হয়) – ১.০ %
উৎস কর (এক লক্ষ টাকার উপরের জন্য প্রযোজ্য) – ১.০ %
মোট = ৬.০%

এছাড়াও প্রতিটি দলিল রেজিষ্ট্রির সময় ৫০/= (পঞ্চাশ) টাকা মূল্যের ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা ও একটি নোটিশ সংযুক্ত করতে হয়। উক্ত নোটিশে ১/= টাকা মূল্যের কোর্ট ফি সংযুক্ত হয়। দলিল রেজিষ্ট্রি করতে ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে দলিল সম্পাদন করতে হয় এবং ষ্ট্যাম্পের বাদবাকী মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে চালান করে, চালানের কপি সংযুক্ত করতে হয়।

দলিলের সার্টিফাইড কপি উত্তোলনের ক্ষেত্রে সরকারী ফি নিম্নরূপ:

ষ্ট্যাম্প বাবদ – ২০ টাকা
কোর্ট ফি – ৪ টাকা
মোট= ২৪ টাকা
লেখনী বাবদ দলিলের প্রতি ১০০ শব্দ বা অংশ বিশেষের জন্য বাংলার জন্য ৩ টাকা
প্রতি ১০০ ইংরেজী শব্দ বা অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা
জরুরী নকলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০ টাকা
উক্ত নকল চার পৃষ্ঠার বেশি হলে প্রতি পৃষ্ঠার জন্য ৫ টাকা

দান দলিল রেজিস্ট্রেশন এর নিয়ম:

রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হয়।

দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নরূপ:

স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বো-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি ফি ১০০ টাকা।

উল্লিখিত সম্পর্কের বাইরের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পাদিত দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রির ফি হবে কবলা দলিল রেজিস্ট্রির জন্য প্রযোজ্য ফি’র অনুরূপ।

জীবন স্বত্ত্বে দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিঃ

স্প্যাম্প এ্যাক্ট ১৯০৮ এর ৫৮ নং আর্টিক্যাল অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান (মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) এর জন্য জীবন স্বত্ত্বে দানের বিধান হলো – যে প্রতিষ্ঠানের নামে সম্পত্তি দান করা হবে সে প্রতিষ্ঠান ঐ সম্পত্তি শুধু ভোগ-দখল করতে পারবে, সম্পত্তি কোনরূপ হস্তান্তর করতে পারবে না। এরূপ জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে দানকারীর নামে। কোন কারণে ঐ প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর না থাকলে সম্পত্তি দানকারীর মালিকানায় চলে যাবে এবং দান দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

স্ট্যাম্প ফি – ২%
রেজিস্ট্রেশন ফি – ২.৫%
ই-ফিস প্রযোজ্য

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/তাজিন

 

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G